টাইম শব্দের অর্থ সময় বা কাল। এ টাইম থেকে টাইমার এসেছে। হিমায়ন ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রনের সময়, তাপমাত্রা, চাপ, আর্দ্রতা, হিমায়ক প্রবাহ ইত্যাদি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে সংরক্ষণ করে সিস্টেমকে স্বয়ংক্রিয় করা হয়। সময় স্বয়ংক্রিয় করার জন্য টাইমার ব্যবহার করা হয়।
টাইমার
টাইমার হল সময়ের প্রেক্ষিতে নিয়ন্ত্রিত এক প্রকার স্বয়ংক্রিয় সুইচ। ঘড়ির অনুরূপ নির্ধারিত সময় অন্তর অন্তর এ ডিভাইস পদ্ধতির বৈদ্যুতিক প্রবাহের সংযোগ ও বিচ্ছিন্নের মাধ্যমে ইউনিটকে নিয়ন্ত্রণ করে। তাই একে টাইম ক্লক ও বলা হয়। সময়ের ভিত্তিতে টাইমার বর্তনীর একাধিক অংশের বিদ্যুৎ চালিত যন্ত্র-যন্ত্রাংশকে নিয়ন্ত্রন করে । বৈদ্যুতিক বা যান্ত্রিক শক্তি দিয়ে চালিত যে ডিভাইজ স্বয়ংক্রিয় ভাবে সময়ের প্রেক্ষিতে বৈদ্যুতিক বর্তনীর একাধিক অংশকে পর্যায়ক্রমে চালু ও বন্ধ করে তাকে টাইমার বলে । টাইমার রেফ্রিজারেশনের ক্ষেত্রে হিমায়ন বর্তনী (কম্প্রেসর মোটরকে) অফ করিয়ে ডিফ্রস্টিং হিটারের লাইন চালু করে দেয়। ডিফ্রস্টিং লাইন অফ করে নির্ধারিত সময় শেষে পুনরায় মোটরকে অন করে দেয়। অর্থাৎ টাইমার সিস্টেমের দুই বা ততোধিক লোড সম্বলিত সমান্তরাল বৈদ্যুতিক বর্তনীকে নিয়ন্ত্রণ (অফ-অন) করে। অফ-অন এর সময়টা নির্ভর করে টাইমারের পিরিয়ড সেটিং এর উপর যা সাধারণত নির্মাতা কর্তৃক নির্ধারিত থাকে ।
টাইমারের প্রকারভেদ
ক) গঠনগত দিক দিয়ে টাইমার দুই ধরনের -
১. বৈদ্যুতিক টাইমার (Electrical Timer): বৈদ্যুতিক শক্তি দিয়ে চালিত হয় ।
২. যান্ত্রিক টাইমার (Mechanical Timer): যান্ত্রিক শক্তি দিয়ে চালিত হয়।
খ) ডিলে সময়ের উপর ভিত্তি করে দুই প্রকার-
১। On Delay Timer: লোড চালু হবার যতক্ষণ পর লোড বন্ধ হবার কথা ঠিক ততক্ষণ পর লোড বন্ধ হলে তাকে On delay timer বলে ।
২। Off Delay Timer: লোড বন্ধ হবার যতক্ষণ পর লোড চালু হবার কথা ঠিক ততক্ষণ পর লোড চালু হলে তাকে Off delay timer বলে ।
গ) টাইমারের টার্মিনাল সংখ্যার উপর ভিত্তি করে এটি দুই প্রকার-
১। চার টার্মিনাল বিশিষ্ট টাইমার
ক) নিউট্রাল লাইন সংযোগ (মোটর) টার্মিনাল
খ) ফেজ ইন (ফেজ সংযোগ লাইন) টার্মিনাল
গ) কম্প্রেসর মোটরের সংযোগ টার্মিনাল
ঘ) ডিফ্রস্ট হিটার সংযোগ টার্মিনাল
২। পাঁচ টার্মিনাল বিশিষ্ট টাইমার
ক) নিউট্রাল লাইন সংযোগ (মোটর) টার্মিনাল
খ) কমন বা ফেজ ইন (ফেজ সংযোগ লাইন) টার্মিনাল
গ) কম্প্রেসর মোটরের সংযোগ টার্মিনাল
ঘ) কুলিং ফ্যান মোটরের সংযোগ টার্মিনাল
ঙ) ডিফ্রষ্ট হিটার সংযোগ টার্মিনাল
টাইমারের কার্যপ্রণালি
টাইমার বৈদ্যুতিক বা যান্ত্রিক শক্তি দিয়ে চালিত একটা স্বয়ংক্রিয় ডিভাইস যা সময়ের প্রেক্ষিতে বৈদ্যুতিক বর্তনীকে চালু ও বন্ধ করে। এ নির্ধারিত সময়ান্তর কন্ট্যাক্ট পয়েন্টগুলোকে পর্যায়ক্রমে অফ-অন করে । অফ- অনের এ পিরিয়ড যথাক্রমে ২৪ বা ১৮ বা ১২ ঘণ্টা অন্তর অন্তর হতে পারে। যা নির্মাতার পরিকল্পনার উপর নির্ভরশীল। সুতরং বিভিন্ন রকমের টাইমারের কার্যপ্রক্রিয়াও বিভিন্ন। নিচে টাইমারের কার্যপদ্ধতি বর্ণনা করা হল-
বৈদ্যুতিক টাইমার
বিদ্যুৎ দিয়ে চালিত টাইমারকে বৈদ্যুতিক টাইমার বলে । টাইমারে ৪টি টার্মিনাল থাকে । টার্মিনাল চারটির নাম হল- ক. কমন বা ফেজ, খ. নিউট্রাল, গ. কম্প্রেসর মোটর, ঘ. হিটার। এই টাইমারের প্রধানত রাজেড ক্যাম, ডায়াল, বডি ও কমন ও নিউট্রালের মধ্যে একটা মোটর কয়েল থাকে । মোটরের রোটরের সাথে একটি চিকন শ্যাফট ও কয়েকটি গিয়ার ও পিনিয়ন থাকে। চিকন শ্যাফটের সাথে বড় গিয়ারের সমন্বয় থাকার কারণে শ্যাফটি খুব দ্রুত এবং গিয়ারটি খুব ধীরে ঘোরে।
প্রথম অবস্থায় থার্মস্টাটটি বা সুইচের সাহায্যে টাইমারের কমন বা ফেজ ইন কানেকশন পয়েন্টে বিদ্যুৎ প্রবাহ পায় । ফলে মোটরটি চলতে থাকে । নির্ধারিত সময় অতিক্রম হবার পর টাইমারের মোটরটি কর্তৃক রাজেড ক্যাম পরিমিত পরিমাণ সরে যায়। সাথে সাথে কম্প্রেসর মোটরের কন্ট্যাক্ট বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় । তখন অভ্যন্তরীণভাবে হিটার পয়েন্ট সংযোগ প্রাপ্ত হয়। সাপ্লাই পাবার পর একটা নির্দিষ্ট সমর পর্যন্ত হিটার উত্তপ্ত হতে থাকে । নির্ধারিত সময় অতিক্রমের পর টাইমার মোটর রাজেড ক্যামকে আবার সরিয়ে দেয়ার সাথে সাথে হিটার কষ্ট্যাক্ট পয়েন্ট বিচ্ছিন্ন হয় এবং কম্প্রেসর মোটর পুনরার সংযোগ পায় এবং চলতে থাকে । এভাবে পর্যায়ক্রমে মোটর চালু হিটার বন্ধ এবং হিটার চালু মোটর বন্ধের মাধ্যমে পদ্ধতি সচল থাকাতে ফ্রিজার চেম্বার বরফ মুক্ত থাকে ।
টাইমারের ব্যবহার ক্ষেত্র
বিভিন্ন প্রকার কাজ সম্পাদন করার জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে টাইমার ব্যবহার করা হয়। একই ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন কাজ সম্পন্ন হতে পারে, আবার ভিন্ন ক্ষেত্রে একই কাজ সংঘটিত হতে পারে। টাইমার যে সমস্ত ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় তা হল-
১) টাইম ডিলে রিলে
২) মোটর কন্ট্রোল
৩) পাম্প মোটর কন্ট্রোল
৪) এজিটেটর কন্ট্রোল
৫) ডিফ্রস্ট হিটার কন্ট্রোল
৬) রেফ্রিজারেটরের মোটর ও হিটার কন্ট্রোল
Read more